ফারহান ফেরদৌস
বাংলাদেশে বেড়েছে ডলারের দাম, আবার জাপানে চাহিদার তুলনায় কম হচ্ছে নতুন গাড়ির উৎপাদন। এর মধ্যে ডলারের চাহিদা কমাতে সরকার কঠিন করে দিয়েছে গাড়ি আমদানি। সব মিলিয়ে দেশে গত চার মাসে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম গড়ে ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা গাড়ির দাম সেভাবে বাড়াতে পারিনি। কারণ একদিকে করোনা মহামারিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়েছিল। সেটা শেষ না হতে হতেই শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সব মিলিয়ে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমে গছে। এখন যদি আমরা মুনাফা করতে চাই, গাড়ি বিক্রি হবে না। আমরা ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শুধু কিছুটা দাম বাড়িয়েছি।’
বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল হক বলেন, ‘মূলত ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বাড়ছে। এ ছাড়া গাড়ির সরবরাহে একটু সংকট তৈরি হয়েছে। গাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত মাইক্রোচিপসংকটের কারণে উৎপাদনও কম হচ্ছে। ফলে জাপানে নতুন গাড়ি না পেয়ে অনেকে পুরোনো গাড়ি কিনছে। এ কারণে আমদানি করার মতো গাড়ি বাংলাদেশ কম পাচ্ছে।’
গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা। অথচ চলতি মাসে হয়েছে ১০৭ টাকা, যা প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি।
চলতি মাসে জাপানের টয়োটা বিশ্বব্যাপী গাড়ির উৎপাদন ১ লাখ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি হোন্ডা ৪০ শতাশং গাড়ি কম উৎপাদন কম করবে বলে জানিয়েছে।
বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল হক বলেন, ব্যবহৃত গাড়ির সরবরাহ একদিকে যেমন কমেছে, অন্যদিকে ডলারের দাম বেড়েছে। ফলে দেশে গাড়ির দাম বেড়ে গেছে। আবার সরকার বিলাসপণ্যের আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এলসি মার্জিন ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করেছে। আগে কোনো পণ্য আমদানি করতে হলে ব্যাংকে পণ্যমূল্যের ১০ শতাংশ জমা দিতে হয়েছে। এখন পুরো ১০০ শতাংশ টাকা জমা দিতে হচ্ছে। এর ফলে আমদানি আগের থেকে কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আগে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা, এখন ডলারের দাম বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা। আগে ৮৫ টাকার ওপর ডিউটি দিতে হতো ১৩০ শতাংশ। এখন ১১০ টাকার ওপর ডিউটি দিতে হচ্ছে ১৩০ শতাংশ।
গাড়ির দাম কতটা বেড়েছে, এই প্রশ্নর জবাবে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০১৭ মডেলের টয়োটা এক্সিও গাড়ি আগে বিক্রি হতো ১৭ লাখ টাকায়। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ২৩ লাখ টাকা। আবার আগের তুলনায় বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশের মতো।
জিয়া অটোজের জিয়াউল ইসলাম জানান, গাড়ির দাম ১৫ শতাংশের মতো বেড়েছে আর বিক্রি কমেছে ৭০ শতাংশ।
এইচএনএস অটোমোবাইলসের স্বত্বাধিকারী ও বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিন-চার মাসে গাড়ির দাম বেশি বেড়েছে। দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশের মতো। তবে গাড়ি কেনার চাহিদা কমে গেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। তাই আমরা সেভাবে দাম বাড়াতে পারিনি।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম কমলে গাড়ির দামও কমবে।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গত তিন মাসে চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন এবং মূল অভিযুক্তদের আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ অবস্থায় উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়ে যাওয়া, পুলিশের ওপর হামলাসহ মানুষের আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এতে উৎকণ্ঠা বাড়ছে সচেতন মহলে।
গজারিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে উপজেলায় চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন স্থান থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে গত ৮ মার্চ পোড়াচক বাউশিয়া গ্রাম-সংলগ্ন নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় ডালিম দেওয়ান নামে একজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয় বলে জানা যায়। গত ৭ এপ্রিল ভবেরচর ইউনিয়নের পৈক্ষারপাড় গ্রাম-সংলগ্ন হিজলতলা বিলের জোড়া পুকুর এলাকা থেকে অর্ধগলিত এক পুরুষের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ১৫ এপ্রিল উপজেলার টেংগারচর ইউনিয়নের বৈদ্দারগাঁও গ্রামে ভুট্টাখেতের পাশ থেকে অজ্ঞাত এক তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং মরদেহের পাশ থেকে রক্তমাখা একটি কাঁচি উদ্ধার করা হয়। গত ২৮ এপ্রিল নিখোঁজের দুই দিন পর মেঘনা নদীর নয়ানগর এলাকা থেকে বিল্লাল নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার দুই বন্ধু তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
নিহত ডালিম দেওয়ানের বড় ভাই আমিনুল দেওয়ান বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন আটক হলেও আমরা পুলিশের ও রকম কোনো তৎপরতা দেখছি না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আগ্রহ নেই তাদের। এ অবস্থায় আমরা একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছি।’
নিহত বিল্লালের স্ত্রী খায়রুন নেসা লাকী বলেন, বিল্লাল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, তা এখন পানির মতো পরিষ্কার। বিষয়টি নৌ-পুলিশ তদন্ত করছে। এ ঘটনায় পুলিশ এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মুন্সীগঞ্জ নাগরিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুজন হায়দার জনি বলেন, ‘ন্যায় বিচার না পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থা হারাবে মানুষ। আর সাধারণ মানুষের আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল দায়িত্ব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। অপরাধ প্রবণতা কমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে।’
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ডালিম দেওয়ান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শামীমসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে বিল্লাল হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে এখনো পর্যন্ত আটক করা যায়নি। অভিযুক্তদের আটকে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিব খান বলেন, ‘এগুলো বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। এতে সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতি ঘটছে, তা বলা যাবে না। চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার হওয়ায় সেগুলো নৌ-পুলিশ দেখছে। আর বাকি দুটি আমরা দেখছি। আমরা যে দুটি মামলার তদন্ত করছি, তাদের কারও পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত অজ্ঞাত তরুণীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট এনআইডি সার্ভারের সঙ্গে ম্যাচ করছে না। অন্যদিকে অজ্ঞাত পুরুষের মরদেহটি অর্ধগলিত হওয়ায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের পরিচয় উদ্ঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’
খুলনা-মোংলা রেলপথ চালুর মাধ্যমে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে এ পুরো অঞ্চলে। উদ্বোধনের সাত মাস পর শনিবার সকাল ১০টায় খুলনা-মোংলা রেলপথ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। মোংলা কমিউটার নামে ট্রেনটি বেনাপোল রেলস্টেশন থেকে ৫৪৯ যাত্রী নিয়ে নিজ গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এর আগে সকালে ট্রেনটি খুলনা থেকে ছেড়ে ৯টা ২৫ মিনিটে বেনাপোল জংশনে পৌঁছায়। সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে সকাল ১০টায় মোংলার উদ্দেশে যাত্রা করে ট্রেনটি।
স্থানীয়রা বলছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এ পথে ট্রেন চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নও পূরণ হলো। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মোংলা কমিউটার ট্রেনটি খুলনার মোহাম্মদ নগর স্টেশনে পৌঁছে। পাঁচ মিনিট বিরতি দিয়ে দুপুর ১টার দিকে যাত্রী নিয়ে মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। খুলনার মোহাম্মদ নগর রেলস্টেশনের টিকিট বুকিংয়ের দায়িত্বে থাকা মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত। আজকে নতুন রেলপথে ট্রেন চালু হচ্ছে। স্টেশনে জনতা ও যাত্রীদের অনেক ভিড়। যাত্রীদের জন্য মোংলা থেকে বেনাপোল যাওয়ার ও বেনাপোল থেকে মোংলা গমনাগমনে সুবিধা হলো।’
এ রুটে ট্রেনটি মোট আটটি স্টেশনে দাঁড়াবে। খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত এর সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, এরপর ফুলতলা থেকে মোংলা নতুন রেলপথে এ ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। খুলনা-মোংলা নতুন এই রুটে ট্রেনটি যাত্রাবিরতি করবে ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশন, আড়ংঘাটা রেলওয়ে স্টেশন, মোহম্মদনগর রেলওয়ে স্টেশন, কাটাখালী রেলওয়ে স্টেশন, চুলকাটি রেলওয়ে স্টেশন, ভাগা রেলওয়ে স্টেশন, দিগরাজ রেলওয়ে স্টেশন ও মোংলা রেলওয়ে স্টেশনে।
এ ছাড়া বেনাপোল থেকে ট্রেন ছাড়ার পর নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চেঙ্গুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালি, চুলকাটি বাজার, ভাগা ও দিগরাজ স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে মোংলায় যাবে। সূচি অনুযায়ী ট্রেনটি মোংলায় পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। এরপর মোংলা থেকে ট্রেনটি ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং বেনাপোলে পৌঁছাবে বিকাল সাড়ে ৪টায়। মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন এ রুটে একই সময়ে ট্রেন চলাচল করবে। ট্রেনটিতে মোট আসন সংখ্যা ৭১৬।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদনের পর এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। নানা জটিলতায় পাঁচ দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। ৯১ কিলোমিটার নতুন এ রেলপথে রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলসেতু নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া ১১টি প্ল্যাটফর্ম, ১০৭টি কালভার্ট, ৩১টি ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাসের নির্মাণ সম্পন্ন। এরই মধ্যে চার দফায় পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলেছে এ রুটে।
রক্তদানের কার্যক্রমকে ও রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরন বার্তা আরও ব্যাপক হারে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটি'র খুলনা বিভাগের উদ্যোগে কুষ্টিয়া জেলার শিল্পকলা একাডেমিতে বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় এর উদ্বোধন করেন বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক জিয়াউল হাসান আমিন।
উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. আকুল উদ্দিন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘যেসকল মানুষ এমন মহৎ কাজে যুক্ত থাকে তাদেরকে আমি শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির সকল বীরকে জানাই স্যালুট। ইনশাআল্লাহ্ বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির মাধ্যমে আমরা সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে একদিন।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধুমহল ব্লাড ডোনার সোসাইটির সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আনিসুজ্জামান নাহিদ এবং সাবেক প্রধান সমন্বয়কসহ বিভিন্ন বিভাগীয় সমন্বয়ক গণ।
উল্লেখ্য, এদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩০০ এর অধিক স্বেচ্ছাসেবীকে নিয়ে এ বিশাল আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিটের দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আজ শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর।
তিনি বলেন, ‘দুপুরে ১৩ নম্বর তানজিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাঁঠালতলী বাজারে আকস্মিক আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। মুহুর্তেই আগুন বাজারসহ ক্যাম্পের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে এপিবিএন পুলিশ তাৎক্ষণিক উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে অবহিত করেন। উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। এরমধ্যে কক্সবাজার, রামু ও টেকনাফ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনকে খবর দেওয়া হয়। বেলা আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন লাগার কারণ এখনো অজানা।’
তিনি আরও জানান, আজ শনিবার দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্পের ডি-৩ ব্লকের কাঁঠালতলী বাজারে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। প্রাথমিকভাবে ২ শতাধিক রোহিঙ্গাদের ঘর ও এনজিও সংস্থার কেন্দ্র পুড়ে গেছে। হতাহতের কোন খবর এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
গত ২৪ মে একই ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ভস্মিভূত হয় প্রায় ৩ শতাধিক বসত ঘরসহ নানা স্থাপনা।
কক্সবাজারে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবার আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ১৩ নম্বর তানজিমারখোলা ক্যাম্পের ডি-৩ ব্লকের কাঁঠালতলী বাজারে শনিবার দুপুর ১ দিকে আগুন ধরে।
গত ২৪ মে একই ক্যাম্পে আগুন ধরেছিল। সে আগুনে কেউ হতাহত না হলেও ভস্মীভূত হয় বসতঘরসহ তিন শতাধিক স্থাপনা।
তানজিমারখোলা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক আমির জাফর আগুন ধরার বিষয়টি জানিয়েছেন।
কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
স্থানীয়দের বরাতে আমির জাফর বলেন, ‘দুপুরে ১৩ নম্বর তানজিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাঁঠালতলী বাজারে আকস্মিক আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই আগুন কাঁঠালতলী বাজারসহ ক্যাম্পের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
‘খবর পেয়ে এপিবিএন তাৎক্ষণিক উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে অবহিত করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।’
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি জানিয়ে ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে কক্সবাজার, রামু ও টেকনাফ ফায়ার স্টেশনকে খবর দেয়া হয়েছে।’
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে প্রায় ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভৌগলিক এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিলেন প্রায় ৩ কোটি ৩ লাখ ৯ হাজার ৭০২ গ্রাহক। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এই গ্রাহকদের ৯৯ শতাংশকে ইতোমধ্যে পূনঃসংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৩ কোটি ২ হাজার গ্রাহকক, যা মোট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন গ্রাহকের ৯৯ শতাংশ- ইতোমধ্যে পূনঃসংযোগ পেয়েছেন। অবশিষ্ট দুই লাখ ৮০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ পূনঃসংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে বলেও জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগ আরও জানায়, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) শুক্রবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সব গ্রাহককে পূনঃসংযোগ প্রদান সম্পন্ন করেছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বাকি ১ শতাংশ গ্রাহকের সার্ভিস ড্রপ ও আনুষঙ্গিক মালামাল প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে সংযোগের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাথমিক তথ্যানুসারে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ১০৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৮০টি সমিতির মধ্যে ৬০টি সমিতির শতভাগ গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সমিতি, আরইবি ও ঠিকাদার জনবলসহ বর্তমানে প্রায় ১৭ হাজার জনবল মাঠে কাজ করছে।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত বেনাপোল থেকে মোংলাগামী ট্রেনের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ ১ জুন শনিবার। গত বছরের ১ নভেম্বর খুলনা-মোংলা পর্যন্ত নতুন রেললাইনের উদ্বোধন করা হয়েছিল। উদ্বোধনের ৭ মাস পর এ রুটে আজ বেনাপোল থেকে খুলনার ফুলতলা হয়ে মোংলা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে।
বুধবার রেলওয়ে পশ্চিমজোনের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. আব্দুল আওয়াল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ১ জুন শনিবার বেনাপোল-মোংলা রুটের ট্রেনটি সকাল সোয়া ৯টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাবে এবং দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে মোংলা পৌঁছাবে। একই ট্রেন মোংলা থেকে দুপুর ১টায় ছেড়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় বেনাপোল পৌঁছাবে। এই ট্রেনের সাপ্তাহিক বিরতি থাকবে মঙ্গলবার।
জানা গেছে, বেনাপোল থেকে মোংলার দূরত্ব প্রায় ১৩৮ কিলোমিটার। নতুন এই রুটটির কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ছাড়ার পর নাভারন, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চেঙ্গুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা, খুলনার ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালি, চুলকাটি বাজার, ভাগা ও দিগরাজ স্টেশনে যাত্রাবিরতির পর মোংলায় পৌঁছাবে।
ওই চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, বেনাপোল থেকে খুলনা চলাচলের সময় এটির নাম বেতনা এক্সপ্রেস ঠিক রেখে খুলনা-মোংলা রুটে চলাচলের সময় এটি মোংলা এক্সপ্রেস নামে চলবে।
খুলনা-মোংলা রেলপথের নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান জানান, বর্তমানে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইনে ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী রয়েছে। ইতোমধ্যে ৮ স্টেশনের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালকুদার জানান, খুলনা-মোংলা রুটের জন্য এখনো জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। দেশের বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন থেকে জনবল এনে আপাতত কমসংখ্যক জনবল দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এই রুটে ট্রেন চলাচলের কোনো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে না বলে তিনি জানান।
সম্প্রতি বন্ধ ঘোষণা করা কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি আবারও চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। তবে শুধুমাত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে স্পেশাল ট্রেন হিসেবেই এটি চালু হবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইঞ্জিন ও কর্মী সংকটে বন্ধ রাখা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে স্পেশাল ট্রেনটি আবারও বিশেষ ট্রেন হিসেবে চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১২ জুন থেকে পুনরায় চালু হতে যাওয়া বিশেষ ট্রেনটি চলবে ১ সপ্তাহ।
এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মে) রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (এসিওপিএস) কামাল আখতার হোসেন সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ট্রেন বন্ধের নির্দেশনা জারি করা হয়।
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ও বণ্যপ্রাণীদের প্রজনন মৌসুম হওয়ার কারণে ১ জুন থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ করায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ সময় পর্যটক, জেলে-বাওয়ালীসহ সাধারণ মানুষের চলাচলও বন্ধ থাকবে।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সকল নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। এরপর ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞার সময় এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছরের এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মো. নুরুল করিম বলেন, ‘প্রতি বছর জুন থেকে আগস্ট, এই তিন মাস সুন্দরবনে মাছ ও বণ্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশিরভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। তাই এ সময়ে সুন্দরবনে পর্যটকসহ জেলে-বাওয়ালীদের বনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকে।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশা করছি, তিন মাসের এ নিষেধাজ্ঞায় সুন্দরবন তার ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠে জীববৈচিত্র্য নিয়ে আবারও আগের রুপে ফিরবে।’
এদিকে, তিন মাসের নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে পড়েন সুন্দরবনের জেলে, বাওয়ালী ও পর্যাটন খাতের সঙ্গে জড়িতরা।
সুন্দরবন-সংলগ্ন চিলা এলাকার জেলে জামাল শেখ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বন থেকে বাড়িতে ফিরে আসি। ঝড়ের কারণে মাছ ধরতে পারিনি। এখন তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কীভাবে সংসার চালাব?’
তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে সাগরে মাছ ধরা জেলেরা চাল পেলেও আমরা কিছুই পাই না। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমাদেরও সহায়তা দেয়া হোক।’
সুন্দরবনের পর্যাটকবাহী বোটের চালক কালাম বলেন, ‘পর্যাটক না আসলে আমাদের বোট বন্ধ। নিষেধাজ্ঞার এ সময় আমাদের খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ও বাসা-বাড়িতে কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত করার উদ্দেশ্যে নারী পাচার করে আসছে একটি চক্র। এমন অভিযোগে চক্রের মূলহোতাসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৩।
গ্রেপ্তাররা হলেন, ইতি বেগম (৩৬) ও তার স্বামী ওমর ফারদিন খন্দকার ওরফে আকাশ (৩০)। র্যাব বলছে গ্রেপ্তার ইতি বেগম নারী পাচার চক্রের মূলহোতা এবং তার স্বামী ওমর ফারদিন খন্দকার ওরফে আকাশ তার প্রধান সহযোগী। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নারায়নগঞ্জের বন্দর বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বিকেলে র্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এএসপি মো. শামীম হোসেন দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানের বরাতে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের জনশক্তি রপ্তানীর কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। তারা সামাজিক ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের যুবতী ও কিশোরী নারীদেরকে দুবাইয়ের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ও বাসা-বাড়িতে উচ্চ বেতনে চাকুরী এবং বিনামূল্যে থাকা খাওয়ার লোভনীয় সুযোগ-সুবিধার কথা বলে ফাঁদে ফেলেন।
দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক দরিদ্র নারী টাকা পয়সা ছাড়া দুবাই গিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও স্বচ্ছল হওয়ার আশায় দুবাই যেতে রাজি হন। এই প্রলোভনে যারা রাজি হয় তাদেরকে চক্রটির মূলহোতা ইতি বেগমের দুবাই প্রবাসী বোন শিউলী বেগমের কাছে পাঠানো হয়। শিউলী বেগম মূলত দুবাইয়ে পাচার করা এসব নারীদের এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে নিয়ে যান। পরবর্তীতে শিউলী বেগম তার সহযোগীদের নিয়ে পাচারকৃত নারীদের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে অসামাজিক কাজে বাধ্য করেন।
এদের মধ্যে কেউ অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে অস্বীকার করলে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গেলে তাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং দেশে থাকা পাচারকৃত নারীর পরিবারকে ভয়-ভীতি দেখায়।
শামীম হোসেন আরও জানান, গত ৮ মার্চ চক্রটি বন্দর থানার ঝাউতলা এলাকার দরিদ্র পরিবারের একজন নারীকে রেস্টুরেন্টে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে দুবাইতে পাচার করে। দুবাই পৌঁছার পর কথা অনুযায়ী কাজ না পেয়ে এবং নির্যাতনের মাধ্যমে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী নারী তার পরিবারকে বিষয়টি জানান। একইভাবে দুবাইতে পাচার করা একাধিক নারীকে নির্যাতনের মাধ্যমে অসামাজিক কাজে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও ভুক্তভোগী নারী তার পরিবারকে জানান।
ভুক্তভোগী ওই নারীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার সকালে বন্দর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এই নারী পাচারকারী চক্রের দুইজনকে গ্রেপ্তা করা হয়। চক্রের পলাতক অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান এ র্যাব কর্মকর্তা।
কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন নোয়াখালীয়া পাড়ায় অভিযান চালিয়ে ৩ কেজি ১০০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ মিয়ানমারের দুই মাদক কারবারিকে আটক করেছে বার্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের আটক করা হয়। আজ শুক্রবার বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- মো. আলম (১৯) ও মো. আয়াছ (২১)। তারা দু’জনই মিয়ানমারের মংডু জেলার বাসিন্দা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) একটি টহলদল মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন নোয়াখালীপাড়ায় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি শুরু করে।
এক পর্যায়ে শাহপরীরদ্বীপ হতে হাজমপাড়াগামী একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চেকপোস্টের কাছে এলে তল্লাশির জন্য থামানো হয়। অটোরিক্সার পেছনের সিটে বসা দুই যাত্রীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়।
এসময় তাদের হাতে থাকা ব্যাগের ভেতর থেকে ৩ কেজি ১০০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করা হয়।
জব্দকৃত ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ আটককৃত ব্যক্তিদেরকে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী মৃত্যুর সংখ্যা এখন ১০০ স্পর্শ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বন থেকে ৯৬টি হরিণ এবং ৪টি বন্য শুকরের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।
বনের কটকা, কচিখালী, করমজল, পক্ষীর চর, ডিমের চর, শেলার চর ও নারিকেল বাড়িয়া এলাকা থেকে মৃত প্রাণীগুলো উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি ১৮টি হরিণ এবং একটি অজগর সাপ অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বন বিভাগ বলছে, ‘ঘূর্ণিঝড়ে বন বিভাগের বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তবে আর্থিক মূল্যে নিরূপণযোগ্য নয়, এমন ক্ষতিই হয়েছে বেশি। যার মধ্যে অন্যতম হলো বনের শতাধিক পুকুর প্লাবিত হয়ে নোনা পানি ঢুকে পড়া। এতে বন্যপ্রাণী ও বনজীবীরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
১১ কিলোমিটার গোল বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ঝড়ে বনের গাছপালা ও প্রাণীর ক্ষতির প্রকৃত চিত্র কী, সেই হিসাব দিতে আরও সময় প্রয়োজন বলে বন বিভাগ জানিয়েছে।
বন বিভাগ ও সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালে এবার ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় সুন্দরবন। স্বাভাবিক সময়ে ২৪ ঘণ্টায় ২ বার ভাটা এবং ২ বার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় বনের একটি অংশ। কিন্তু এবারই প্রথম ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে থেকে পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টায় বনে কোনো ভাটা হয়নি। অর্থাৎ এই দীর্ঘ সময় পুরো বন পানিতে তলিয়ে ছিল। আর জোয়ারে পানির উচ্চতা ছিল স্বাভাবিকের চাইতে ৫ থেকে ৬ ফুট, কিছু এলাকায় এর চেয়েও বেশি। দীর্ঘ সময় এতো উুঁচ জোয়ারের কারণে মঙ্গলবার থেকে বণ্যপ্রাণীর বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করছিলেন বন কর্মকর্তারা।
বন বিভাগ থেকে আরও জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার পর বুধবার সকালে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে আশঙ্কা সত্যি হতে থাকে। কটকা, কচিখালী, দুবলা, হিরণপয়েন্টের সৈকতে হরিণের মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর জানান স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ৯৬টি মৃত হরিণ, ৪টি বন্যশুকর উদ্ধার করে বন বিভাগ মাটিচাপা দিয়েছে। কিন্তু বিশাল আয়তনের সুন্দরবনে প্রাণীদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারছে না বনবিভাগ।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি সুন্দরবন হয়েছে, আগে কখনো তা হয়নি। এর সঠিক তথ্য বের করতে আরও সময় প্রয়োজন।’
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর বনবিটের অধীন কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি এলাকায় টিলা ধসে গীতা কাহার (৩০) নামে এক নারী চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিন শ্রমিক।
স্থানীয়রা জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা বাগানের নারীসহ কয়েকজন শ্রমিক পার্শ্ববর্তী আদমপুর বনবিট এলাকার কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করতে যান। এসময় একটি টিলার অংশ ধসে পড়লে মাটি চাপায় তার মৃত্যু হয়।
গীতা কাহার পাত্রখোলা চা বাগানের নতুন লাইনের মৃত শংকর কাহারের কন্যা। আহতদের পাত্রখোলা চা বাগান হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপন।
আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদাল হোসেন ও মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসিদ আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘তারা বনবিট এলাকায় খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজে ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে মরদেহ পরিবার সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ঘটনার সংবাদ পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।’